সাহিত্য ও সংস্কৃতি ।।
স্বাধীনতা
রহমান মাসুদ
অত্যাচার শোষন,নিপীড়ন,বৈষ্যমতার বিভেদ
প্রতিটি ক্ষেত্রে হরণ ন্যায্য প্রাপ্য অধিকার,
পশ্চিমা শাষকের কুচক্রান্তের রোষানলে
শান্তি প্রিয় নিরীহ বাঙালির লুন্ঠিত আহার।
এদেশের সম্পদ নির্বিচারে স্হানান্তর
যোগাতে সামরিক জান্তার আমোদ প্রমোদ,
মেহেনতি জনগনের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি
নিজ অংশের সমৃদ্ধের হীনচেতনা বোধ।
পথহারা বাঙালির পরাধীনতার মর্মবেদনায়
পায়ের শিকল বেড়ী ছিন্ন ভিন্নের আকুলতা,
সন্ধান চে গুয়েভারা, কাস্ত্রোর প্রতিচ্ছায়া
সবার কন্ঠে,প্রয়োজন একজন বলিষ্ঠ নেতা।
জাতির সে ঘোর অমানিশার অন্ধকারে
বাংলার আকাশে উদিত উজ্জল এক নক্ষত্র
নক্ষত্রের ছায়াতলে সারে সাত কোটি প্রাণ
সুদৃঢ় বন্ধনে মুক্তিকামী বীর জাতি আবদ্ধ।
সেই প্রিয় মুখ সবার হৃদয়ের অঙ্কিত নাম
মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান,
সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির সিংহ হৃদয়ের সংস্পর্শে
পরাধীনতার ভাঙ্গতে শিকল স্বাধীনতার গান।
বঙ্গবন্ধুর মুষ্টিবদ্ধ হাতে হাত রেখে প্রতিজ্ঞা
প্রতিটি বাঙালিই একেকজন মুজিব সেনা,
প্রতিবাদী কন্ঠের সুর আর নয় পিছু হাটা
জয় বাংলার মন্ত্রেই শেষ গন্তব্যের ঠিকানা।
বিপ্লবী নেতার জ্বালাময়ী বলিষ্ঠ নেতৃত্বে
সামরিক জান্তা চিন্তায় চিন্তিত,ভ্র কুন্ঞ্চিত,
৭০ সালে নির্বাচন আহবানের গৃহীত সিদ্ধান্ত
নির্বাচনে জাতি বঙ্গবন্ধুকে করেনি বঞ্চিত।
নির্বাচনে নিরংঙ্কুস সংখ্যা গরিষ্ঠতা দেখে
ক্ষমতা হস্তান্তরে কত নীল নকশার পায়তারা,
গোল টেবিল আলোচনার ফন্দি ফিকিরে
গোপনে সামরিক শক্তি বৃদ্ধিতে মাতোয়ারা।
টাল বাহানায় মুক্তিকামী বাঙালির ক্রুদ্ধতা
বঙ্গবন্ধুর ডাকে রেসকোর্স ময়দানে আগমন,
৭ই মার্চ সৃষ্টি অভুতপূর্ব মুক্তির মহামিলন
সভাস্হল পরিপূর্ন স্হান নেই তিল ধারন।
বজ্রকন্ঠের বজ্র হুঙ্কারে রচিত শ্রেষ্ঠ মহাকাব্য
“এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম” প্রিয় বানী,
“এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম” কথাটি
বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষনারই প্রতিধ্বনি।
“প্রত্যেক ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তুলো” নির্দেশে
টেকনাফ হতে তেঁতুলিয়া,সুরমা হতে পাথুরিয়া,
বঙ্গবন্ধুর বজ্রকন্ঠের আহবানের স্পন্দন
প্রবাহিত মুক্তিকামীর প্রতিটি শিরা উপশিরা।
বাঙালির গনজাগরনে বেসামাল স্বৈরাচার
ঘটলো নজিরবিহীন বর্বর ঘটনার সূত্রপাত,
২৫শে মার্চ নিস্তব্ধ কালো রাতের আধারে
হায়নার নিষ্ঠুর ছোবল চায় বাঙালির নিপাত।
অমানবিক হত্যাযজ্ঞের চিহ্ন সারা দেশময়
অলিতে গলিতে পুরুষ নারী শিশুর মৃত দেহ,
বিনা অপরাধে শান্তিকামী নিরিহ মানুষের বুকে
অগনিত বুলেটের আঘাতে রক্ত প্রবাহিত।
প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শক্রর হাতে গ্রেফতার
অস্ত্রের মুখে বাঙালিকে বশের পায়তারা,
“দাবায়া রাখতে পারবা না” সেই হুশিয়ারী
অন্তরে গাঁথা বাঙালি তাই লড়তে ঘরছাড়া।
মুজিব নগরে গঠিত রাষ্ট্র স্বাধীন বাংলার
লাল সবুজের পতাকা সগর্বে উড্ডীয়মান
“আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি” মন্ত্রে
বিউগলের সুরে বাজে স্বাধীনতার গান।
“রক্ত যখন দিয়েছি আরো রক্ত দেব”উক্তিটি
সংক্রামন প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধার চেতনায়,
নির্ভয়ে বীরেরা মুক্তির সন্মুখ সমরে রত
মাতৃভূমি রক্ষায় প্রিয় জীবন তুচ্ছ নির্দ্বিধায়।
সকল পেশার জনগন মুক্তিযুদ্ধে সামিল
পাক সেনাদের প্রতিরোধে নির্ভিক দূর্বার,
স্বদেশের কিছু দুষ্টক্ষত মায়ের ইজ্জত লুন্ঠনে
শক্রর সহযোগীতায় আল বদর রাজাকার।
সারে নয় মাস বিভীষিকা রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম
দুই লক্ষ বীরঙ্গনার লুন্ঠিত অমূল্য ইজ্জত,
ত্রিশ লক্ষ শহীদের চির মহান আত্নত্যাগে
১৬ই ডিসেম্বর শক্রর আত্নসমর্পণের শপথ।
স্বাধীন দেশের সর্বত্র যুদ্ধকালীন ধ্বংসযজ্ঞ
তারই মাঝে নতুন করে দেশ গড়ার পণ,
পাকিস্তানের কারাগার হতে মুক্ত স্বাধীন দেশে
১০ই জানুয়ারী সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির প্রত্যাবর্তণ।
যুদ্ধবিধ্বস্ত প্রিয় মাতৃভুমিকে করে অবলোকন
বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার দৃঢ় পরিকল্পনা,
জাতিকে আপন ভেবে অরক্ষিত জীবন যাপন
দেশের মানুষের মুখে হাসি ফুটানোর সাধনা।
দেশ স্বাধীন হলেও স্বদেশী শক্র হয়নি শেষ
গোপনে চলমান হীনচক্রান্তের বীজ বপন,
১৫ই আগষ্ট ১৯৭৫এ সৃষ্টি কলঙ্কিত অধ্যায়
সপরিবারে মহান নেতার জীবন প্রদীপ হরণ।
পরবর্তীতে কত ঘটনা অবলোকন নির্দ্বিধায়
ব্যথিত জাতীয় পতাকা কলঙ্কিতর ব্যথায়,
পতাকার চির বিরোধী চির শক্রর বাহনেও
স্বাধীন দেশের পতাকা উড়েছে মরি লজ্জায়।
রক্তের সাগর পেরিয়ে যে স্বাধীনতার অর্জন
আজ প্রজন্মের হাতেই সে পতাকার দন্ড,
প্রজন্মকে জানতে হবে স্বাধীনতার ইতিহাস
যা বক্ষে ধারন করে নেবে সকল সিদ্ধান্ত।
স্বাধীনতা নয় ছেলে খেলার ঠুনকো দ্রব্যাদি
সে তো মায়ের কাছে শপথ করা রক্ত গ্রহন
কত শহীদের দেহ ঘুমায় মাটিকে ভেবে আপন,
সে মাটির সম্মান রাখবই দিয়ে হলেও জীবন।