২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক আকার অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়ারকে ছাড়িয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল।
তিনি বলেন, ‘ওই সময়ে আমরা অর্থনৈতিকভাবে অস্ট্রেলিয়া ও মালয়েশিয়ার ওপরে থাকবো।’ মন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, ‘আমি রূপক অর্থে এই কথা বলছি না। এটি সত্যিকার অর্থে বাস্তবায়ন হবে।’
বৃহস্পতিবার হোটেল সোনারগাঁওয়ের সুরমা হলে আয়োজিত ‘সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ও হাওর জনপদের উন্নয়ন’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে মন্ত্রী এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে হাওর এলাকার উন্নয়নে ৪৭৫ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দের ঘোষণা দেন পরিকল্পনা মন্ত্রী।
তিনি বলেন, এটি বিশেষ বরাদ্দ। এর মধ্যে ৩০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে হাওর এলাকার মানুষের আয় বর্ধক প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে, ১০০ কোটি টাকা ব্যয় হবে রাস্তাঘাট নির্মাণে, আর বাকী ৭৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে সুপেয় পানি নিশ্চিতসহ অন্যান্য অতি প্রয়োজনীয় প্রকল্প বাস্তবায়নে
পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছি। কারণ বিশ্বব্যাংকের মানদণ্ড অনুযায়ী ১০৪৫ মার্কিন ডলার মাথাপিচু আয় নিশ্চিত হলে নিস্ন-মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে ওই দেশকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। কিন্তু বর্তমানে আমাদের মাথাপিছু আয় বেড়ে হয়েছে ১৩১৬ মার্কিন ডলার।’
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, হাওর এলাকার একটি গ্রামে এখনও বিদ্যুৎ যায়নি । এর পরিপ্রেক্ষিতে মুস্তাফা কামাল বলেন, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে শিগগিরই ওই গ্রামে আমার পক্ষ থেকে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করবো।
অর্থনৈতিক অগ্রগতির পরিকল্পনা সর্ম্পকে মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর যোগ্য নেতৃত্বে আমরা আমাদের ঘোষিত সব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। বর্তমানে আমরা ২০৩০ সাল পর্যন্ত সময়ের জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কাজ করছি। ২০৩০ সালের লক্ষ্য ‘ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ’ গঠন করা। আমরা সেই লক্ষ্যেও সফল হবো ইন্শাল্লাহ। এরপর রয়েছে ২০৪১ সালের লক্ষ্যমাত্রা।
মন্ত্রী বলেন, বিশ্বের অর্থনীতি দুটি মানদন্ডের ভিত্তিতে বিবেচনা করা হয়। এর একটি স্বাভাবিক মানদন্ড, অন্যটি ক্ষয়ক্ষমতা বৃদ্ধির সক্ষমতার ভিত্তিতে। এই মানদন্ডে বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বের ১৯৩ টি দেশের মধ্যে ৩৩ তম। আমরা পরিকল্পনামাফিক কাজ করে যাচ্ছি। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার আরো বাড়বে। এই সময়ে আমরা অর্থনৈতিক দিক থেকে অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়াকে ছাড়িয়ে যাবো। এটি রূপক অর্থে বলা হচ্ছে না। এটি সত্যিকার অর্থে বাস্তবায়ন হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী এবং হাওর জীবনযাত্রা সর্ম্পকিত সর্বদলীয় সংসদীয় গ্রুপের (এপিপিজি) চেয়ারপারসন মো. মজিবুল হক। অনুষ্ঠানে ‘সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় হাওর জনপদের উন্নয়নে গৃহীত বিভিন্ন পরিকল্পনা ও পদক্ষেপের বিষয়ে আলোচনা করেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারন অর্থনীতি বিভাগের সদস্য এবং সিনিয়র সচিব ড. শামসুল আলম।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আফরোজা মোয়াজ্জেম, প্রবাসী কল্যান ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইস্রাফিল আলম এমপি, সমাজকল্যান প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিন, শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব মিকাইল শিপার, কনসার্ন ওয়াল্ড ওয়াইড-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর এ কে এম মূসা, প্রযুক্তিবিদ মোস্তাফা জব্বারসহ হাওর এলাকার সব সংসদ সদস্য এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, হাওর এলাকা দেশের ধান এবং আমিষ চাহিদা পূরনের ক্ষেত্রে অগ্রগামি ভূমিকা পালন করে। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে এসব এলাকার মানুষ অবহেলিত থেকে যায়। এ জন্য হাওর এলাকার উন্নয়নে প্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণের তাগিদ দেন তারা।
বক্তারা আরো বলেন, হাওর এলাকাকে একটি সম্ভাবনাময় পর্যটন খাত হিসেবে বিবেচনা করা যায়। তবে এই এলাকার উন্নয়নের নামে যাতে প্রাকৃতিক পরিবেশের কোনো সমস্যা না হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখা জরুরি।