নিজস্ব প্রতিবেদক (কটিয়াদী) ।। কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার বনগ্রামে একই পরিবারের তিন সদস্যের বিরুদ্ধে মা এবং মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর (৪০) বছরের নারীকে (মা) শারীরিক নির্যাতন করে ঘরে আটকে রেখে পল্লী ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসা করান। নির্যাতনের তিনদিন পর পুলিশ ভিকটিমকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য কটিয়াদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করে। বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আছেন। অভিযোগের বিষয়ে এলাকায় লোকমুখে গুঞ্জন থাকলেও চাচা-ভাতিজা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় প্রকাশ্যে তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে রাজী হয়নি। এ ব্যাপারে মঙ্গলবার পর্যন্ত কোন মামলা হয়নি বা কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।
জানা গেছে, উপজেলার বনগ্রাম ইউনিয়নের বনগ্রাম গ্রামের নারী গর্ভাবস্থায় ১৫-১৬ বছর পূর্বে তার স্বামী মারা যায়। স্বামীর মৃত্যুর পর একটি কন্যা সন্তান জন্ম হয়। অভাব অনটনের সংসারে বিভিন্ন বাড়িতে ঝি-এর কাজ করে মেয়েকে নিয়ে সংসার চলে। দীর্ঘদিন যাবত একই এলাকার প্রভাবশালী নেতা বনগ্রাম ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সেক্রেটারী সেলু মিয়া ও তার ভাই ধলু মিয়ার বাড়িতে কাজ নেয়। সুযোগ পেলেই সেলু মিয়া ও ধলু মিয়া তাকে নানা রকম সুবিধার প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করে। গত বুধবার বিকালে কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে আম নিয়ে তাদের মাঝে কথা কাটাকাটি হলে ভিকটিম ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশ করে দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সেলু মিয়া তার উপর শারীরিক নির্যাতন চালায়। নির্যাতনে তার মাথা ও শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে মারাত্মক জখম হয়। বিষয়টি ধামা চাপা দিতে নির্যাতিতাকে বাড়িতে আটকে রেখে স্থানীয় পল্লী ডাক্তার দিয়ে তার চিকিৎসা করায়। গত শুক্রবার রাতে বাড়িতে পুলিশ আসতে পারে সংবাদ পেয়ে নির্যাতিতা নারীকে ধলু মিয়ার ছেলে বনগ্রাম ইউনিয়ন যুবলীগের সেক্রেটারী সুমন মিয়া ভিকটিমের বাড়িতে দিয়ে আসে। শনিবার ভোরে পুলিশ ভিকটিমকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করে।
ভিকটিম জানায়, তাদের বাড়িতে কাজ নেয়ার পর থেকেই দুই ভাই সেলু মিয়া ও ধলু মিয়া সুযোগ পেলেই তাকে ধর্ষণ করে এবং ধলু মিয়ার ছেলে সুমন মিয়াও অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী তার নাবালিকা মেয়েকে ধর্ষণ করেছে।
গচিহাটা পুলিশ ফাঁড়ির এস আই উত্তম কুমার বলেন, শুক্রবার রাত ১১টার দিকে ওসি স্যারের বার্তা পেয়ে বনগ্রাম গিয়ে ভিকটিমকে খোঁজে বের করি। ভিকটিমকে তার ঘরে কাতরাতে দেখে সিএনজি অটোরিক্সা দিয়ে তাদেরকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করি। তবে ধর্ষণের অভিযোগটি সত্য নয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার তপন কুমার দত্ত বলেন, মহিলা ডাক্তার দিয়ে তার প্রাথমিক পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে ধর্ষণের কোন নমুনা বা আলামত পাওয়া যায়নি। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন আছে এবং তার চিকিৎসা চলছে।
কটিয়াদী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ জাকির রব্বানী বলেন, ভিকটিমকে শারীরিক নির্যাতনের সংবাদ পেয়ে তার বাড়ি থেকে এনে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ধর্ষণের কোন অভিযোগ নেই।