স্পোর্টস রিপোর্ট ।। প্রিয় দল ব্রাজিলকে সমর্থন দিতে ম্যাচের অনেক আগে থেকেই স্টেডিয়ামের বাইরে সমর্থকদের ভীড়। সেন্ট পিটার্সবার্গ যেন হলুদের জনসমুদ্র। তবে তাদের মুখে হাসি ফোটাতে কোস্টারিকার জমাট রক্ষণকে কিছুতেই পরাস্ত করতে পারছিলেন না নেইমার-কৌতিনহোরা।
নির্ধারিত সময়েও গোল না পেয়ে নিশ্চিত ড্রয়ের পথেই ছিল ম্যাচটি। অতিরিক্ত সময়ে এসে নিজেদের জাদু দেখিয়েছে ব্রাজিল। অতিরিক্ত সময়ে কৌতিনহো আর নেইমারের দুর্দান্ত দুই গোলে কোস্টারিকাকে ২-০ ব্যবধানে হারিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডের অনেকটা কাছে চলে এসেছে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।
প্রথমার্ধ থেকেই দাপট দেখিয়ে খেলেছে টুর্নামেন্টের হট ফেবারিট ব্রাজিল। কেবল গোলটাই পাচ্ছিল না। ম্যাচের তৃতীয় মিনিটে কৌতিনহোর দূরপাল্লার শট বক্সের অনেক উপর দিয়ে চলে যায়।
১৩ মিনিটে বড় একটি সুযোগ পেয়েছিল কোস্টারিকাও। ডানপাশ থেকে ক্রিশ্চিয়ান গ্যাম্বোয়া দারুণভাবে বলটা বাড়িয়ে দিয়েছিলেন বক্সের মধ্যে দৌঁড়ে যাওয়া ইয়োহান ভেনেগাসের কাছে, তার শট গোলপোস্টের বাম পাশ ঘেঁষে বেরিয়ে যায়।
২৫ মিনিটে ডানপ্রান্ত দিয়ে দৌঁড়ে বল নিয়ে যান মার্সেলো, দেন নেইমারকে। নেইমার বক্সের মধ্যে থাকা গ্যাব্রিয়েল হেসুসের কাছে বল দিলে সেটা জালে জড়াতে ভুল করেননি ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার। তবে সেটা অফসাইডর কারণে বাতিল করে দেন রেফারি।
২৮ মিনিটে বল নিয়ে বক্সের মধ্যে ঢুকে গিয়েছিলেন নেইমার। কোস্টারিকা গোলরক্ষক কেইলর নাভাস এগিয়ে এসে কোনোমতে সেটা ফিরিয়ে দেন। পরের মিনিটে আরও দুটি আক্রমণ করে ব্রাজিল। বাঁ প্রান্তে বক্সের বাইরে থেকে মার্সেলোর দূরপাল্লার শট একটুর জন্য পোস্টের ডানপাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। ২৯ মিনিটে কৌতিনহো আরেকটি শট নেন একই জায়গা থেকে, সেটাও পোস্টের একটু উপর দিয়ে চলে যায়।
৩২ মিনিটে আরও একবার বল নিয়ে বক্সে ঢুকে যান নেইমার, পাস দিয়েছিলেন হেসুসকে। তিনি সেটায় মাথা ছুঁয়াতে পারেননি, প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডার ব্রায়ান অভিয়েদো বল ক্লিয়ার করেন। অফসাইডও ডাকেন রেফারি।
৪০ মিনিটে একাই বল নিয়ে বক্সের বাইরে বাঁ দিক থেকে শট নিয়েছিলেন মার্সেলো, নাভাসের সেটা ধরতে কষ্ট হয়নি। ৪৩ মিনিটে ব্রাজিলের আরেকটি সংঘবদ্ধ আক্রমণ রুখে দেয় কোস্টারিকা। ফলে গোলশুন্য সমতা নিয়েই প্রথমার্ধ শেষ করে দুই দল।
দ্বিতীয়ার্ধে ৪৮ মিনিটে নিশ্চিত একটি গোলের সুযোগ নষ্ট করে ব্রাজিল। পাওলিনহোর ক্রসে আরেকটি সংঘবদ্ধ আক্রমণে গোলমুখে জটলা পাকিয়েও সাফল্য পায়নি সেলেসাওরা। ৪৯ মিনিটে একইরকম আক্রমণে আরও একবার হতাশ হতে হয় তাদের। ফ্যাগনারের ক্রস থেকে বল পেয়ে হেসুসের শট গোলবারে লেগে ফেরত আসে।
৫৬ মিনিটে পাওলিনহোর ক্রস থেকে বক্সের মধ্যে নেইমারের শট আঙুলের ডগা দিয়ে ফিরিয়ে দেন নাভাস। পরের মিনিটে পাওলিনহোর কাছ থেকেই বল পেয়েই সরাসরি রিয়াল গোলরক্ষকের হাতে মেরে দেন কৌতিনহো।
৭০ মিনিটে নেইমারের কর্ণার থেকে কাসিমিরো দারুণ একটি হেড নিয়েছিলেন। কিন্তু সেটা দক্ষতার সঙ্গে ধরে ফেলেন নাভাস। মিনিট দুয়েক পর কোস্টারিকা ডিফেন্ডারের ভুলে বল পেয়ে গিয়েছিলেন নেইমার। তবে পিএসজি তারকা বলটা আরও একটু ভেতরে না নিয়ে বক্সের বাইরে থেকেই শট মেরে দেন, যদিও সেটা একটুর জন্য জাল পায়নি।
৭৭ মিনিটে বলতে গেলে একাই মাঝমাঠ থেকে বল নিয়ে কোস্টারিকার বক্সে ঢুকে পড়েন নেইমার। কিন্তু ফাঁকা পেয়েও শটটা নিতে পারেননি। প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারের আলতো ছোঁয়ায় বক্সের মধ্যেই পড়ে যান নেইমার। ভিএআরে দেখা যায় এটা ফাউল হয়নি।
গোল পেতে এরপর আক্রমণ চালিয়েই গেছে ব্রাজিল। ৮৫ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে কৌতিনহোর শট ধরে ফেলেন নাভাস। একই মিনিটে কাসিমিরো, হেসুস আর নেইমারের সমন্বিত আরেকটি আক্রমণ ডিফেন্সে আটকে গেলে গড়িয়ে যাওয়া বল শুয়ে ধরে ফেলেন কোস্টারিকা গোলরক্ষক।
নির্ধারিত সময়ে গোলশুন্য ডঅতিরিক্ত সময়ের প্রথম মিনিটে এসে অবশেষে হতাশা কাটে ব্রাজিলের। ফার্নান্দোর ক্রস পেয়ে বক্সের মধ্যে ফিরমিনোর মাথা হয়ে হেসুসের পায়ে বল যায়। সেখান থেকে তিনি সেটা দেন দৌঁড়ে আসা কৌতিনহোকে। বার্সেলোনা মিডফিল্ডার সেটা জালে জড়াতে একটুও ভুল করেননি (১-০)।
চতুর্থ মিনিটে ফিরমিনো আর কৌতিনহোর ওয়ান টু ওয়ান পাসে আরেকটি গোলের সুযোগ পেয়েছিল ব্রাজিল। তবে সেটা কাজে লাগাতে পারেননি। অতিরিক্ত সময়ের শেষ মিনিটে এসে দুর্দান্ত আরেকটি গোল করে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। বক্সের ডানপাশ থেকে কস্তার পাস থেকে গোল করেন নেইমার (২-০)।