স্পোর্টস রিপোর্ট : ক্রোয়েশিয়ার কাছে ৩-০ গোলে হারের পর হতাশ লিওনেল মেসির ড্রেসিং রুমে হেঁটে যাওয়ার ছবিটিকে ২০১৮ বিশ্বকাপের অন্যতম প্রতীকী ছবিগুলোর একটি হিসেবে বলা হচ্ছে। পাঁচবারের বিশ্বসেরা খেলোয়াড় দুই ম্যাচে কোনো গোল করতে পারেননি। এমনকি আইসল্যান্ডের সঙ্গে একটি পেনাল্টিও মিস করেছেন।
২০০২`এর পর প্রথমবার বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে আর্জেন্টিনার।
৩০ বছর বয়সী মেসি আরেকটি বিশ্বকাপ হয়তো খেলতে পারবেন, কিন্তু অনেক ফুটবল বোদ্ধার মতেই রাশিয়া বিশ্বকাপেই আর্জেন্টিনার হয়ে কোনো মেজর শিরোপা জেতার শেষ সুযোগ তার সামনে।
ঘরোয়া লিগ ও কাপের `ডাবল` জিতলেও বার্সেলোনায় শেষ মৌসুমটা খুব একটা ভাল যায়নি মেসির। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে টানা তৃতীয়বারের মত বিদায় নিতে হয় তাদের। আর এই তিনবারই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদের হাতে ওঠে শিরোপা।
মেসির এই মৌসুমের হতাশাজনক পারফরমেন্সের অনেক কারণ থাকতে পারে, যেগুলোর একটি তালিকা তৈরি করেছেন বিবিসি`র ক্রীড়া সাংবাদিকরা।
১. তিনি শারীরিকভাবে ক্লান্ত
২০১৭-১৮ ইউরোপীয় মৌসুমে ৫৪টি ম্যাচ খেলেছেন মেসি, ২০১৪-১৫ মৌসুমের পর যা সর্বোচ্চ। পরিসংখ্যান ওয়েবসাইট ট্রান্সফারমার্কট`এর তথ্য অনুযায়ী গত মৌসুমে মোট ৪ হাজার ৪৬৮ মিনিট খেলেছেন তিনি আর গড়ে প্রতি ম্যাচে ৮২ দশমিক ৭ মিনিট মাঠে ছিলেন। মৌসুম শেষে বার্সেলোনার হয়ে ৪৫টি গোল আর ১৮টি অ্যাসিস্ট করেন মেসি।
২. ছোট একটি ইনজুরিতে ভুগছেন তিনি
২০১৮`র এপ্রিলে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের সূত্রের বরাত দিয়ে দেশটির পত্রিকা ক্লারিন প্রতিবেদন প্রকাশ করে যে ডান পায়ের উরুর মাংসপেশিতে সামান্য চোট রয়েছে মেসির, যার কারণে দৌড়ানো ও গতি পরিবর্তন করতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে তার। বিশ্বকাপের আগে ইতালি আর স্পেনের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে মেসি না খেললে বিষয়টি আলোচনায় আসে।
৩. আর্জেন্টিনা দলের বাজে পারফরমেন্স
রাশিয়া বিশ্বকাপের দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের বাছাইপর্বে আর্জেন্টিনার পারফরমেন্স ছিল দারুণ হতাশাজনক। নানা সমীকরণ শেষে বাছাইপর্বের শেষ ম্যাচে বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলা নিশ্চিত করতে সক্ষম হয় তারা। বাছাইপর্বে সাত গোল করে মেসি আর্জেন্টিনার সর্বোচ্চ স্কোরার হলেও সমর্থক ও গণমাধ্যমের ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয় তাকে।
গত বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা ফাইনাল খেললেও তাদের শেষ বিশ্বকাপ বিজয় ছিল ১৯৮৬ সালে। ২০০৪ আর ২০০৮ এ পরপর দু`বার অলিম্পিক শিরোপা জিতলেও, ১৯৯৩ সালের কোপা আমেরিকার পর গত ২৫ বছরে কোনো মেজর টুর্নামেন্টের শিরোপা জিততে পারেনি তারা।
৪. রোনালদোর সঙ্গে তুলনার মানসিক চাপ
গত প্রায় এক দশক ধরে বিশ্ব ফুটবলে মেসির একমাত্র তুলনা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। এবারের বিশ্বকাপে মেসির ঠিক বিপরীত ফর্মে রয়েছেন তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী।
স্পেনের বিপক্ষে দুর্দান্ত এক হ্যাটট্রিক করে রোনালদোর রাশিয়া বিশ্বকাপ শুরু হয়, যেখানে ফ্রি কিক থেকে নেওয়া রোনালদোর তৃতীয় গোলটি বিশ্বকাপের ইতিহাসের অন্যতম স্মরণীয় গোলগুলোর একটি হয়ে থাকবে।
দ্বিতীয় ম্যাচেও রোনালদোর একমাত্র গোলেই মরক্কোকে হারায় পর্তুগাল।
এবারের টুর্নামেন্টে রোনালদো যেখানে অপ্রতিরোধ্য ফর্ম প্রদর্শন করছেন, সেখানে পুরো আসরে মেসির বলার মত মুহূর্ত বলতে আইসল্যান্ডের সঙ্গে পেনাল্টি মিস।
আর মেসি যা এখনো করতে পারেননি দু`বছর আগে ইউরো ২০১৬`তে দলকে শিরোপা জিতিয়ে তাই করে দেখিয়েছেন রোনালদো।
আর্জেন্টিনার জন্য সমীকরণ
ক্রোয়েশিয়ার কাছে ৩-০ ব্যবধানে হারের পর এখন নকআউট রাউন্ডে ওঠার জন্য ভাগ্যের ওপর নির্ভর করতে হবে আর্জেন্টিনাকে।
প্রথম ম্যাচে আইসল্যান্ডের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করায় মঙ্গলবার নাইজেরিয়ার সঙ্গে শেষ ম্যাচে বড় ব্যবধানে জয়ও আর্জেন্টিনার পরের রাউন্ডে উত্তরণ নিশ্চিত করতে পারবে না।
শুক্রবার নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে আইসল্যান্ড নাইজেরিয়াকে হারালে শেষ ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে ড্র করলেই নক আউট রাউন্ড নিশ্চিত হবে তাদের। অর্থাৎ পরের দুই ম্যাচে আইসল্যান্ড একটি ড্র ও একটি জয় পেলেই নিশ্চিত হবে আর্জেন্টিনার বিদায়।
তবে নাইজেরিয়াকে হারানোর পর আইসল্যান্ড ক্রোয়েশিয়ার কাছে হারলে সুযোগ থাকবে আর্জেন্টিনার সামনে। সেক্ষেত্রে শেষ ম্যাচে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে বড় ব্যবধানে জিততে হবে তাদের।
আর আইসল্যান্ড নাইজেরিয়ার কাছে হারলেও শেষ ম্যাচে বড় ব্যবধানেই জয়ের লক্ষ্য রাখতে হবে আর্জেন্টিনাকে।
কারণ শেষ ম্যাচে আইসল্যান্ড ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে দিলে এবং আর্জেন্টিনা নাইজেরিয়ার বিপক্ষে জয় পেলে আর্জেন্টিনা ও আইসল্যান্ড দুই দলেরই পয়েন্ট সমান হবে।
তখন গোল ব্যবধানে নির্ধারিত হবে গ্রুপ রানার আপ। ক্রোয়েশিয়ার কাছে তিন গোল খাওয়ায় গোল ব্যবধানের হিসেবেও এখন পিছিয়ে রয়েছে আর্জেন্টিনা।
আইসল্যান্ড তাদের পরের দু`টি ম্যাচ ড্র করলে বা হারলে নিজেদের শেষ ম্যাচে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে জিতলেই নক আউট রাউন্ড নিশ্চিত হবে আর্জেন্টিনার। সূত্র: বিবিসি