শিক্ষা রিপোর্ট : যারা মফস্বলের স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেছে তারা ভিকারুননিসা নূন কলেজে ভর্তি হতে পারবে না! অবাক হচ্ছেন! না, এটাই সত্যি। ভর্তির জন্য নির্বাচিত শতাধিক ছাত্রীকে ভর্তি করাতে চায় না ভিকারুননিসা নূন কলেজ কর্তৃপক্ষ। ঢাকা শহরের বাইরে গ্রাম থেকে আসা মেধাবী এই ছাত্রীরা নাকি ‘গ্যারাইম্মা’।
সরকার প্রবর্তিত এসএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির বিধান মেনে আবেদন করে ভিকারুননিসায় ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েও গ্রাম বা মফস্বল শহর থেকে আসার কারণে তারা ভর্তি হতে গিয়ে এমন বিড়ম্বনার মুখে পড়েছেন। ২৭ জুন ভিকারুননিসার বেইলি রোডস্থ মূল শাখায় ভর্তি হতে গেলে শিক্ষকরা দুর্ব্যবহার করেছেন ভর্তিচ্ছু ছাত্রী ও তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষাবোর্ডেরও সমালোচনা করছেন এমপিওভুক্ত ভিকারুন নিসার কতিপয় শিক্ষক।
ভিকারুননিসার শিক্ষকদের এমন বৈষম্যমূলক আচরণে ক্ষুব্ধ হয়েছেল এসব ছাত্রী ও তাদের অভিভাকরা। সংক্ষুব্ধরা ২৭ জুন বিকেলে অপমানজনক অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। তারা ভিকারুননিসার এহেন আচরণের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষাবোর্ডে লিখিত অভিযোগ দেবেন। প্রয়োজনবোধে আদালতের শরণাপন্ন হবেন বলেও জানিয়েছেন কারা।
ভর্তিচ্ছু সুরাইয়া (ছদ্মনাম) কান্নাজড়িত কন্ঠে জানান, ‘আজ (২৭ জুন) সকাল দশটায় আমার বোনকে সঙ্গে নিয়ে ভিকারুননিসায় যাই। প্রথম এক ঘন্টা শুধু এর কাছ থেকে ওর কাছে গিয়েছি। কেউ ভালোভাবে কথাও বলেন না। একটু মুখের দিকে তাকানোর পরই বিড় বিড় করে বলতে থাকেন, মন্ত্রণালয় ও বোর্ড এই গ্যারাইম্মাদের আমাদের কলেজে চাপিয়ে দিয়েছে। তোমরা ভর্তি হতে পারবে না।’
সুরাইয়া বলেন, ‘আমার কী অপরাধ? আমাকে তো মনোনয়ন দিয়েছে বোর্ড। আমি গোপালগঞ্জের একটি সরকারি স্কুল থেকে গোল্ডেন জিপিএ ফাইভ পেয়েছি সায়েন্স বিভাগে।’
সুরাইয়ার এমন সহজ সরল প্রশ্নে আরও ক্ষুব্ধ হন ভিকারুননিসার শিক্ষকরা।
অনেক ঘোরাঘুরি পর সুরাইয়ার বোন জানতে পারেন ভিকারুননিসার নিজস্ব ছাত্রীদের জন্য সিট বরাদ্দ এক হাজার চারশর মতো। তারা সবাই আবেদন অনুযায়ী ভিকারুননিসায় ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়ে ভর্তি কার্যক্রম শেষ করেছেন প্রথম দিনেই। কিন্তু ‘বহিরাগত’ বা ‘গ্যারাইম্মা” একশ এগারোজনকে কেন বোর্ড কর্তৃপক্ষ নির্বাচিত করল, তা নিয়েই ভিকারুননিসার শিক্ষকদের যত রাগ। বোর্ডের নিয়ম মানেন না বলে ভর্ভিচ্ছুদের সাফ জানিয়ে দিয়েছেন ভিকারুননিসার কতিপয় শিক্ষক।
এসএসসি ও সমমানের ফলাফলের ভিত্তিতে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির বিধান চালু করেছে সরকার। শিক্ষাবোর্ডসমূহ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ভর্তির জন্য আবেদন গ্রহণ ও প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করে দেয়। তালিকা অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা ভর্তি হয়।
দেশের অন্যতম সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভিকারুন নিসার শিক্ষকদের এহেন আচরণে ক্ষুব্ধ আরেকজন অভিভাবক বলেন, বহিরাগত কোনও ছাত্রীকে ভর্তি নেয়া হবে না বলে তারা জেনেছেন।
এহেন বৈষম্যমূলক আচরণের বিষয়ে জানতে চাইলে ভিকারুননিসার গর্ভর্নিং বডির অভিভাবক প্রতিনিধি মারুফ মনসুর বলেন, এমনটা হওয়া উচিত না। কাল খতিয়ে দেখব।”
ক্ষুব্ধ একজন অভিভাবক বলেন, ‘ভিকারুননিসা এমপিও পাওয়া কলেজ। কিন্তু সরকার তথা শিক্ষা মন্ত্রণায়ের বিধান মানবে না এটা কি করে সম্ভব?
বিষয়টির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে সাবেক শিক্ষাসচিব মো: নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘এহেন আচরণ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বোর্ডের তালিকা অনুযায়ী ভর্তি নিতে বাধ্য করতে হবে।’