রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের বাৎসরিক আয় কমেছে। তবে বেড়েছে সদ্যবিদায়ী মেয়র ও মহানগর বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের বাৎসরিক আয়।
রাজশাহী আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসের পাওয়া তথ্যমতে, মনোনয়নপত্রের সঙ্গে প্রার্থীরা নিজেদের হলফনামায় ব্যক্তিগত যাবতীয় তথ্য সন্নিবেশিত করার পাশাপাশি তাদের বাৎসরিক আয়-ব্যয়ের হিসাবও জমা দিয়েছেন।
এই দুই প্রার্থী নির্বাচন কমিশনে যে হলফনামা দিয়েছেন, তা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, লিটনের আয় কমলেও বেড়েছে বুলবুলের।
হলফনামার তথ্য মতে, মেয়র প্রার্থী লিটনের শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএ পাস। তার পেশা আইন ব্যবসা। লিটনের নিজের নামে জমা আছে এক কোটি ৩৮ লাখ ৫৩ হাজার টাকা। আর ২০১৩ সালের চেয়ে এবার বার্ষিক আয় প্রায় সাড়ে ১১ গুণ বেড়েছে সদ্যবিদায়ী মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের। বেড়েছে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের পরিমাণও। বুলবুলের নিজের আছে ২৫ ভরি স্বর্ণ।
বুলবুলের দাখিলকৃত হলফনামা থেকে জানা গেছে, ২০১৩ সালের নির্বাচনে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের নির্বাচন
কমিশনে দাখিলকৃত হলফনামায় বার্ষিক আয় দেখান ১ লাখ ৯২ হাজার টাকা। এবারের হলফনামায় বার্ষিক
আয় দেখিয়েছেন ২১ লাখ ৫৭ হাজার ২৬০ টাকা। হিসাব অনুযায়ী, গত নির্বাচনের এবার তার বার্ষিক আয় প্রায় সাড়ে ১১ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বার্ষিক আয় মেয়রের দায়িত্বে থাকা সম্মানি থেকে আসতো বলে বুলবুল তার হলফনামায় উল্লেখ করেছেন।
দাখিলকৃত হলফনামার সম্পদ বিবরণীতে তিনি দেখান, উল্লিখিত ২১ লাখ ৫৭ হাজার ২৬০ টাকা বার্ষিক আয়ের মধ্যে মেয়রের দায়িত্বে থাকাকালীন ৫ বছরে প্রতি বছর মূল বেতন ১১ লাখ ৫৭ হাজার টাকা, বাড়িভাড়া বাবদ ১০ লাখ ৪০ হাজার টাকা এবং অন্যান্য ভাতাবাবদ পেয়েছেন ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা। অব্যাহতিপ্রাপ্ত আয়ের পরিমাণ ৩ লাখ টাকা। ব্যাংক মুনাফা ২৬০ টাকা। হলফনামায় তিনি এবার তার নীট সম্পদ দেখিয়েছেন ৪৯ লাখ ৭৪
হাজার ৩৭১ টাকার। বছরে তিনি ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৮১৫ টাকার আয়কর পরিশোধ করেছেন।
বিএনপি মনোনীত মেয়রপ্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, ‘মেয়রের দায়িত্ব পালনের সম্মানি থেকে আমার এ বাৎসরিক আয়। আগের বছর তো মেয়র ছিলাম না।স্বাভাবিকভাবেই মেয়রের সম্মানির ভাতা পাওয়ায় আয় কিছুটা বেড়েছে। এই আয় সম্পূর্ণ বৈধ উপায়ে অর্জিত এবং এর আয়কর যথাযথভাবে পরিশোধ করেছি।’
এদিকে খায়রুজ্জামান লিটনের দাখিলকৃত হলফনামা পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ২০১৩ সালে এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের দাখিলকৃত হলফনামায় বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছিল ৫৮ লাখ ৭৫ হাজার ৭৭২ টাকা। তবে এবার দাখিলকৃত হলফনামায় তার বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছে ৪২ লাখ ৪৫ হাজার ২৮৮ টাকা। এ হিসেবে বিগত পাঁচ বছরে মেয়র লিটনের বার্ষিক আয় কমেছে ১৬ লাখ ৩০ হাজার ৪৮৪ টাকা। দাখিলকৃত হলফনামার সম্পদ বিবরণীতে লিটন গৃহ সম্পত্তি থেকে ৫ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ টাকা, কৃষি খাত থেকে ১৬ লাখ টাকা, ব্যবসা থেকে ১২ লাখ টাকা, মুলধনী লাভ ৪ লাখ ২৩ হাজার ৮০ টাকা, এবং অন্যান্য উৎস থেকে ১৯ লাখ ৯ হাজার ৭০৮ টাকার বাৎসরিক আয় দেখান। তিনি বছরে ৮ লাখ ৫৮ হাজার ৮২২ টাকা আয়কর দিয়েছেন। লিটনের নীট সম্পদের পরিমাণ ২ কোটি ৬৮ লাখ ৯৭ হাজার ১৫১ টাকা।
এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘আমার যে সম্পদ তার সবটুকই বৈধ উপায়ে অর্জিত এবং সম্পদের আয়কর যথাযথভাবে পরিশোধ করেছি।’
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, খায়রুজ্জামান লিটন ও মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের বাইরে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী ওয়াশিউর রহমান দোলনের শিক্ষাগত যোগ্যতা উচ্চ মাধ্যমিক। পেশা ঠিকাদার হলেও তার আয়ের উৎস কৃষিখাত ও বাড়িভাড়া। এছাড়া ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী শফিকুল ইসলাম এমএসএস পাস। তার মনোহারীর দোকান রয়েছে। তার বছরে আয় ২ লাখ টাকা। বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির হাবিবুর রহমানের শিক্ষাগত যোগ্যতা বিকম পাস। তার বছরে আয় ৩ লাখ ৩০ হাজার। আয়ের উৎসব বাড়ি ভাড়া ও ব্যবসা।