muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

খেলার খবর

সর্বকালের সেরা ফুটবল একাদশ

পৃথিবীর প্রায় সব প্রান্তের মানুষ এখন এক উত্তেজনায় ভুগছেন, তাদের আগ্রহ এখন বলা যায় একই বিষয়ে। বিষয়টি হলো বিশ্বকাপ ফুটবল। এমন প্রাণোচ্ছ্বাসে মাতিয়ে রাখার শক্তি ফুটবল ছাড়া অন্য কোনো খেলার নেই। এই খেলা এবং খেলোয়াড়দের প্রতি দর্শকের আগ্রহ তাই সবচেয়ে বেশি। ফুটবলে চমক দেখানো খেলোয়াড়ের সংখ্যাও কম নয়। যে কারণে কে সেরা খেলোয়াড় বা কোনটি সেরা দল- এ নিয়ে তর্ক-বিতর্কের শেষ নেই।

অনেকে ব্রাজিলের বাইরে কোনোভাবেই আর্জেন্টিনা, পর্তুগাল, জার্মানি বা ফ্রান্সকে সেরা দল ভাবতে পারেন না; অন্যান্য দলের সমর্থকরাও তাই। মেসিকে বাদ দিয়ে নেইমার, রোনালদোকে সেরার স্বীকৃতি দিতে আর্জেন্টিনার পাঁড় সমর্থকের বেজায় আপত্তি। এ এক অদ্ভুত মনস্তত্ত্ব। তবে যদি বলা হয়, পৃথিবীর সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়দের নিয়ে ফুটবল দল গঠন করা হবে! তারা সবাই এক দলের হয়ে খেলবে। তাহলে ফুটবলপ্রেমীদের কেমন লাগবে? কিছুক্ষণ চুপ থেকে হয়তো তারা বলে উঠবেন- বাহ! বেশ হয় তাহলে।

হ্যাঁ, বিশ্বের নানা প্রান্তের ফুটবল বিশেষজ্ঞ এবং ক্রীড়া সাংবাদিকের ভোটে ২০১৩ সালের জুনে এমনই একটি ‘কাল্পনিক’ ফুটবল একাদশ গঠন করে জনপ্রিয় ফুটবল সাময়িকী ‘ওয়ার্ল্ড সকার’। মাঠ কাঁপানো সর্বকালের সেরা ফুটবলার ও বিভিন্ন পজিশনে খেলা বিশ্বের ১০৭ জন ফুটবলারের মধ্য থেকে বাছাই করে এগারো জনকে নির্বাচন করা হয়। যদিও অনেক ফুটবলপ্রেমীর প্রিয় ফুটবলার এই একাদশে না থাকায় এই তালিকা নিয়ে নানা ধরনের বিতর্কের সৃষ্টি হয়। কারণ  পেলে, ম্যারাডোনা, মেসি, জিদানদের মতো প্রতিভাবান সেরা ফুটবলাররা এই দলে সুযোগ পেলেও এই তালিকায় নেই ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর নাম। তবে বিতর্কের ঊর্ধ্বে এই একাদশটিকেই সর্বকালের সেরা ফুটবল একাদশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ওয়ার্ল্ড সকারের এই নির্বাচনে ‘প্যানেল’ হিসেবে অংশ নেয় বিভিন্ন দেশের এই সাময়িকীটির প্রতিনিধিসহ মোট ৭৪ জন ফুটবল সাংবাদিক। ৪-৪-২ ফরমেশনে দল গঠন করে প্রত্যেক সাংবাদিককে একটি করে একাদশ জমা দিতে বলা হয়েছিল। পরে এর মধ্য থেকেই ভোটের মাধ্যমে সর্বকালের সেরা ফুটবলারদের নিয়ে একটি ফুটবল একাদশ নির্বাচন করা হয়। তবে যে দলে সবাই সেরাদের সেরা সে দলের কোচটিকেও অবশ্যই তাই সেরা হতে হবে। তাইতো বিশ্বের সেরা ৫৬ জন কোচের ভেতর থেকে নির্বাচন করা হয় একজন কোচ। আর তিনি হলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাবেক কোচ স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন। এবার দেখে নেওয়া যাক কে কে সেই সেরাদের তালিকায় আছেন-

১. সেরা গোলরক্ষক: লেভ ইয়াশিন
সেরাদের সেরা যে ফুটবল দল, সে দলে সেরা গোলরক্ষক তো থাকতেই হবে। তাই বিশ্বখ্যাত গোলরক্ষদের থেকে বাছাই করে সেরা গোলরক্ষক হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন লেভ ইয়াশিন। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের এই গোলরক্ষক ৫৮, ৬২ ও ৬৬ সালের বিশ্বকাপে খেলেছেন। ১৮৫৬ সালে সিডনি অলিম্পিকেও দলকে সোনা জিতিয়েছিলেন তিনি। তার নেতৃত্বে ১৯৬০ সালের ইউরোপীয় ফুটবল প্রতিযোগিতায় শিরোপা অর্জন করে সোভিয়েতরা। এ ছাড়াও দেশের হয়ে ৭৮টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন ইয়াশিন। ১৯৯০ সালের ২০ মার্চ মৃত্যুবরণ করেন ‘ব্ল্যাক স্পাইডার’ নামের এই বিশ্বসেরা গোলরক্ষক।

২. লেফট ব্যাক: পাওলো মালদিনি
বিশ্ব ফুটবলের সেরা ডিফেন্ডার হিসেবে যে নামটি অনায়াসে সামনে আসে তিনি পাওলো মালদিনি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর থেকে দ্বিগুণ ভোট পেয়ে সেরা একাদশে জায়গা করে নেন তিনি। এই ইতালিয়ান ডিফেন্ডার ৯০, ৯৪ ও ৯৮ এর বিশ্বকাপে মাঠ কাঁপানো খেলা দেখিয়েছেন। ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপে ব্রাজিলের বিপক্ষে টাইব্রেকারে ইতালির হার অল্পের  জন্যে তাকে শিরোপা স্পর্শ করতে দেয়নি।

৩. রাইট ব্যাক: কাফু
টানা তিনবারের বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলার কৃতিত্ব রয়েছে এই ব্রাজিলিয়ান ফুটবলারের। তারই গুণে ১৯৯৪ ও ২০০২ সালে বিশ্বকাপ জিতেছে ব্রাজিল। যদিও সেরা একাদশের ভোটে ডিফেন্ডারের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন কাফু। তবে দেশের হয়ে ১৪২টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা কাফু ঠিকই সেরা একাদশে জায়গা করে নিয়েছেন।

৪.  সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার: ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার
বিশ্বের ফুটবল ইতিহাসে বেকেনবাওয়ারই একমাত্র খেলোয়াড় যিনি কোচ, খেলোয়াড় এবং অধিনায়ক থাকাকালে দেশকে বিশ্বকাপ উপহার দিয়েছেন। তার নেতৃত্বেই ১৯৭৪ সালে বিশ্বকাপ জেতে জার্মানি। এছাড়া কোচ হিসেবেও ডগ আউটে দাঁড়িয়ে আবারও জার্মানিকে পুনরায় বিশ্বকাপ শিরোপার স্বাদ পাইয়ে দেন। এমন কিংবদন্তীকে তো সেরাদের সেরা হিসেবে সেরা একাদশে স্থান পেতেই হবে।

৫. সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার: ববি মুর
পায়ের কারিশমা আর রক্ষণভাগে বিশাল দেয়াল তৈরি করে প্রতিপক্ষকে নাস্তানাবুদ করার কৌশলই সেরা একাদশে জায়গা করে দিয়েছে ইংলিশ ফুটবলার ববি মুরকে। ইংলিশদের একমাত্র বিশ্বকাপ জয়ে তিনিই নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তবে সেরা একাদশে স্থান পাওয়ার জন্যে ইতালির ফ্রাঙ্কো বারেৎসির সঙ্গে ভোট-যুদ্ধ করতে হয়েছে তাকে। ১৯৯৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি এই কিংবদন্তী ডিফেন্ডারের মৃত্যু হয়।

৬. মিডফিল্ডার: আলফ্রেডো ডি স্টেফানো
‘ওয়ার্ল্ড সকার’র সেরা একাদশে যে ৪ জন মিডফিল্ডার জায়গা পেয়েছেন তার মধ্যে স্টেফানোই ভোট পেয়েছেন সবচেয়ে কম। তবে ১৯৫৬ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত টানা পাঁচবার ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশীপ জেতা রিয়াল মাদ্রিদের এই আর্জেন্টাইন সেনাকে সেরা একাদশে না নেওয়ার কোনো অবকাশ ছিল না। মাঠের যেকোনো পজিশনে খেলতে পারা বিশিষ্ট এই ফুটবলার স্পেনের হয়েও আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন। তবে বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে খেললেও মূল পর্বে কখনোই খেলা হয়নি তার।

৭. মিডফিল্ডার: জিনেদিন জিদান
ফ্রান্সের মিডফিল্ডার জিনেদিন জিদানের পায়ের জাদু দেখেননি এমন ফুটবলপ্রেমী তার সময়ে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। কারণ ফুটবল পায়ে জাদু দেখিয়ে তিনি ১৯৯৮ সালে ফ্রান্সকে বিশ্বকাপ জিতিয়েছিলেন এবং এনে দিয়েছিলেন ২০০৬ সালে বিশ্বকাপ জেতার সম্ভাবনা। তবে সেবার বিশ্বকাপে ইতালির এক খেলোয়াড়কে মাথা দিয়ে গুঁতো দিয়ে কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েন। মাঠ থেকে তিনি বহিষ্কৃতও হন। ফলে সেবার আর ফ্রান্সের কাপ জেতা হয়নি।

৮. মিডফিল্ডার: ইয়োহান ক্রুইফ
নিজের অনন্য প্রতিভায় ফুটবল খেলাকে বিশেষ জায়গায় নিয়ে যাওয়া খেলোয়াড় ইয়োহান ক্রুইফ সেরা একাদশে জায়গা পাবেন না তা অসম্ভব। ১৯৭৪ সালের বিশ্বকাপে পূর্ব জার্মানি, আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিলকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে হল্যান্ড। তবে বিশ্বকাপের ট্রফিটা আর পাওয়া হয়নি তার।

৯. মিডফিল্ডার: ডিয়েগো ম্যারাডোনা
এই একমাত্র খেলোয়াড় যাকে বাদ দিয়ে সেরা একাদশ গঠন করার সাহস ছিল না ‘ওয়ার্ল্ড সকার’র। একজন খেলোয়াড়কেও যদি সর্বকালের সেরা ফুটবলার বলা হয় সেটা আর্জেন্টাইন খেলোয়াড় ডিয়েগো ম্যারাডোনা, যাকে ফুটবলের ক্ষেত্রে ‘ঈশ্বরের বরপুত্র’ ডাকা হয়। তার নৈপূণ্যেই ১৯৮৬ সালে বিশ্বকাপ জিতেছিল আর্জেন্টিনা। খেলেছে পরের বার ফাইনাল ম্যাচ।

১০. স্ট্রাইকার: পেলে
গায়ের রঙ খুব কালো হওয়ায় তাকে সবাই চেনে ‘কালো মাণিক’ নামে। ফুটবলের ইতিহাসে একজন কিংবদন্তী খেলোয়াড় তিনি। ব্রাজিল ফুটবল দলের শুধু নয়, বিশ্ব ফুটবলে তিনি আকর্ষণীয় এক বিজ্ঞাপন। ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপে বিশেষ প্রতিভা দেখিয়ে ব্রাজিলকে শিরোপা এনে দেন তিনি। তাকে ছাড়া সর্বকালের সেরা একাদশের কথা ভাবা যায় না।

১১. স্ট্রাইকার: লিওনেল মেসি
বর্তমান সময়ে এক অনন্য ফুটবলারের নাম মেসি। অনন্যতা দেখিয়ে আর্জেন্টিনাকে এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপ শিরোপা না এনে দিতে পারলেও, বার্সেলোনার হয়ে বিস্ময়কর খেলা দেখিয়েই চলেছেন বাঁ পায়ের এই জাদুকর। ফুটবলে জাদুকরী প্রভাবই তাকে সেরা একাদশে জায়গা করে দিয়েছে।

Tags: