মুকুট দাস মধু, তাড়াইল (কিশোরগঞ্জ) ।। কিশোরগঞ্জের তাড়াইলে শ্রীশ্রী জগন্নাথদেবের রথযাত্রা শুরু হয়েছে ।
আজ ১৪জুলাই’১৮খ্রি. শনিবার বিকাল ৫টায় উপজেলার সাচাইল গ্রামের শ্রীশ্রী রাধা গোবিন্দ মন্দির থেকে জাঁকজমকপূর্ণ রথযাত্রা তাড়াইল সদর বাজাররে কেন্দ্রীয় শ্রীশ্রী কালিবাড়ী এবং কালনার আখড়া হয়ে একই স্থানে মিলিত হয়ে প্রসাদ বিতরণের মাধ্যমে প্রথম ধাপ শেষ হয়।উক্ত রথযাত্রায় উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে নারী-পুরুষ সহ অসংখ্য পূণ্যার্থী অংশ নেন।আগামী ৭ দিন পর উল্টোরথে একইভাবে প্রদক্ষিণ শেষে সাচাইল শ্রীশ্রী রাধা গোবিন্দ মন্দিরে এসে শেষ হবে রথযাত্রার অনুষ্ঠান।এ উপলক্ষে সাচাইল শ্রীশ্রী রাধা গোবিন্দ মন্দির প্রাঙ্গণে সপ্তাহব্যাপী গীতা পাঠ ও হরিনাম সংকীর্তন অনুষ্ঠিত হবে।
প্রাচীন ভারতীয় গ্রন্থ ‘ব্রহ্মাণ্ডপুরাণ’ ও ‘পদ্মপুরাণে’ও এই রথযাত্রার উল্লেখ পাওয়া যায়। পদ্মপুরাণে বলা হয়েছে যে আষাঢ় মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে রথযাত্রা অনুষ্ঠান শুরু করে শুক্লা একাদশীর দিন পূর্ণযাত্রা বা উল্টোরথ অনুষ্ঠিত হবার কথা। পুরীর জগন্নাথদেবের রথযাত্রাও প্রতি বছর আষাঢ় মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতেই অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। যদিও আষাঢ় মাসের পুষ্যানক্ষত্রযুক্ত শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতেই রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হওয়ার নিয়ম। কিন্তু প্রতি বছর তো আর পুষ্যানক্ষত্রের সঙ্গে আষাঢ় মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথির যোগ হয় না, তাই কেবল ওই শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতেই রথযাত্রা শুরু হয়ে থাকে। তবে কখনও এই তিথির সঙ্গে পুষ্যানক্ষত্রের যোগ হলে সেটি হয় একটি বিশেষ যোগ-সম্পন্ন রথযাত্রা। পদ্মপুরাণে উল্লেখিত রথযাত্রায় শ্রীবিষ্ণুর মূর্তিকে রথারোহণ করানোর কথা বলা হয়েছে। আর পুরীর জগন্নাথদেবের মূর্তি যে শ্রীকৃষ্ণ তথা শ্রীবিষ্ণুরই আর একটি রূপ তা সকলেই স্বীকার করেন। তবে স্কন্দপুরাণে কিন্তু প্রায় সরাসরিভাবে জগন্নাথদেবের রথযাত্রার কথা রয়েছে। সেখানে ‘পুরুষোত্তম ক্ষেত্র মাহাত্ম্য’ কথাটি উল্লেখ করে মহর্ষি জৈমিনি রথের আকার, সাজসজ্জা, পরিমাপ ইত্যাদির বর্ণনা দিয়েছেন। ‘পুরুষোত্তম ক্ষেত্র’ বা ‘শ্রীক্ষেত্র’ বলতে পুরীকেই বোঝায়। অতএব দেখা যাচ্ছে যে সেই পুরাণের যুগেও এই রথযাত্রার প্রচলন ছিল।
‘উৎকলখণ্ড’ এবং ‘দেউল তোলা’ নামক ওড়িশার প্রাচীন পুঁথিতে জগন্নাথদেবের রথযাত্রার ইতিহাস প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে এই রথযাত্রার প্রচলন হয়েছিল প্রায় সত্যযুগে। সে সময় আজকের ওড়িশার নাম ছিল মালবদেশ। সেই মালবদেশের অবন্তীনগরী রাজ্যে ইন্দ্রদ্যুম্ন নামে সূর্যবংশীয় এক পরম বিষ্ণুভক্ত রাজা ছিলেন, যিনি ভগবান বিষ্ণুর এই জগন্নাথরূপী মূর্তির রথযাত্রা শুরু করার স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন। পরবর্তিকালে রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন পুরীর এই জগন্নাথ মন্দির নির্মাণ ও রথযাত্রার প্রচলন করেন।
রথযাত্রা উপলক্ষে উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্র সরকার রথযাত্রায় অংশ নেয়া সকলকে ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানান।রথযাত্রা উদযাপন কমিটির সভাপতি সাগর সরকার এবং সম্পাদক নয়ন সরকার জানান,এবারের রথযাত্রায় গতবারের তুলনায় ভক্তবৃন্দের আগমন বেশি।সেই সাথে তাড়াইল থানা প্রশাসন সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করায় ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ।