muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

খেলার খবর

ইতিহাস গড়া হলো না ক্রোয়েশিয়ার : বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স

আক্রমণ, পাল্টা-আক্রমণ, গোল, আত্মঘাতী গোল, ভিডিও রিপ্লে দেখে পেনাল্টি দেওয়া, গোলরক্ষকের মারাত্মক ভুলে গোল হজম- কী ছিল না ম্যাচে! যেন রোমাঞ্চকর এক প্যাকেজ। এত গোলের ফাইনাল ঠিক কবে দেখেছিল বিশ্বকাপ? ফ্রান্স-ক্রোয়েশিয়া ফিরিয়ে আনল ১৯৬৬ বিশ্বকাপ ফাইনাল। ইংল্যান্ড-পশ্চিম জার্মানির ৫২ বছর পর বিশ্বকাপ ফাইনাল দেখল ছয় গোল। যেখানে শেষ হাসি হাসল ফ্রান্স। ক্রোয়াটদের হৃদয় ভেঙে ফরাসিরা জিতল শিরোপা।

মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে রোববার শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে ক্রোয়েশিয়াকে ৪-২ গোলে হারিয়েছে ফ্রান্স। দ্বিতীয়বারের মতো ফ্রান্স জিতল বিশ্বকাপ। ১৯৯৮ সালে ঘরের মাঠে জিতেছিল নিজেদের প্রথম শিরোপা। ফ্রান্সের কোচ দিদিয়ের দেশম মাত্র তৃতীয় ব্যক্তি, যিনি খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ জিতলেন। প্রথম দুজন মারিও জাগালো ও ফ্রেঞ্জ বেকেনবাওয়ার।

প্রথমার্ধে দুই গোল একরকম উপহারই পায় ফ্রান্স। মারিও মানজুকিচের আত্মঘাতী গোলে ফরাসিরা নেয় লিড। ক্রোয়েশিয়াকে সমতায় ফেরান ইভান পেরিসিক। খানিক পর তিনিই হয়ে যান খলনায়ক। তার হ্যান্ডবলে ভিডিও রিপ্লে দেখে পেনাল্টি দেন রেফারি। পেনাল্টি থেকে ফ্রান্সকে আবার এগিয়ে দেন আঁতোয়ান গ্রিজমান। দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য দুর্দান্ত খেলেছে ফ্রান্স। পল পগবা ও কাইলিয়ান এমবাপের দুটি গোলই হয়েছে অসাধারণ। গোলরক্ষক হুগো লরিসের মারাত্মক ভুলে মানজুকিচ ব্যবধান কমালেও সেটি ফ্রান্সের শিরোপা জয়ের পথে বাধা হতে পারেনি।

গোলরক্ষকের মারাত্মক ভুলে ব্যবধান কমাল ক্রোয়েশিয়া

৬৯ মিনিটে গোলরক্ষক হুগো লরিসের মারাত্মক এক ভুলে গোল খেয়েছে ফ্রান্স। উমতিতি ব্যাকপাস দিয়েছিলেন লরিসকে। এগিয়ে যাওয়া মানজুকিচের অযথায় কাটাতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু মানজুকিচের পায়ে লেগে বল ফাঁকা জালে জড়িয়ে যায়। স্কোরলাইন তখন ফ্রান্স ৪-২ ক্রোয়েশিয়া।

শিরোপার পথে ফ্রান্স!

৫৬ মিনিটে ফ্রান্সকে ৪-১ গোলে এগিয়ে দিয়েছেন কাইলিয়াম এমবাপে। বাঁ দিক থেকে বক্সের সামনে তাকে বল দিয়েছিলেন হার্নান্দেজ। বাঁ পায়ের জোরালো শটে লক্ষ্যভেদ করেন পিএসজি ফরোয়ার্ড। ১৯৫৮ সালে পেলের পর প্রথম টিন এজার হিসেবে বিশ্বকাপ ফাইনালে গোল করলেন এমবাপে। দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জয়ের পথে অনেকটাই এগিয়ে গেল ফ্রান্স।

আরো এগিয়ে ফ্রান্স

৫৯ মিনিটে ফ্রান্সকে ৩-১ গোলে এগিয়ে দিয়েছেন পল পগবা। নিজেদের অর্ধ থেকে তিনি নিজেই প্রথমে লম্বা করে বল বাড়িয়েলেন। কাইলিয়ান এমবাপে বল ধরে পাস দেন গ্রিজমানকে। তিনি আবার বল দেন পগবাকে। তার শট প্রথমে ব্লক করেছিলেন ক্রোয়েশিয়ার ডিফেন্ডার ভিদা। ফিরতি বল পেয়ে জোরালো শটে জালে পাঠান ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড মিডফিল্ডার।

জেনে নিন
প্রথমার্ধে এগিয়ে থেকে ফ্রান্স বিশ্বকাপে কখনো কোনো ম্যাচ হারেনি (২১ জয়, ১ ড্র)। বিশ্বকাপ ফাইনালে প্রথমার্ধে পিছিয়ে পড়ে শিরোপা জয়ের ঘটনা আছে মাত্র একটি। ১৯৩০ সালে প্রথম বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে জিতেছিল উরুগুয়ে। এবার ক্রোয়েশিয়া পারবে?

প্রথমার্ধ শেষে
প্রথমার্ধের খেলা শেষে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ২-১ গোলে এগিয়ে আছে ফ্রান্স। ফরাসিদের দুটি গোলই এসেছে সেট-পিস থেকে। প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপের ফাইনালে আত্মঘাতী গোল করেন ক্রোয়েশিয়ার মারিও মানজুকিচ। দারুণ এক গোলে ক্রোয়েশিয়াকে সমতায় ফেরান ইভান পেরিসিচ। দশ মিনিট পর তিনিই হয়ে যান খলনায়ক। গ্রিজমানের কর্নার থেকে আসা বল লাগে তার হাতে। ভিডিও রিপ্লে দেখে পেনাল্টি দেন রেফারি। স্পট কিকে গোল করে ফ্রান্সকে এগিয়ে দেন গ্রিজমান।

গোল আর গোল!
১৯৭৪ সালের পর এই প্রথম বিশ্বকাপ ফাইনালের প্রথমার্ধে তিন গোল হলো। ৪৪ বছর আগের ফাইনালে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে প্রথমার্ধে ২-১ গোলে এগিয়ে ছিল পশ্চিম জার্মানি। সেবার তারা শিরোপাও জিতেছিল। এবার কি তাহলে ফ্রান্সও…!

পেনাল্টি গোলে আবার এগিয়ে ফ্রান্স
৩৮ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে ফ্রান্সকে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে দিয়েছেন আঁতোয়ান গ্রিজমান। গ্রিজমানের কর্নার থেকে উড়ে আসা বল বক্সের ভেতর ফ্রান্সের মাতুইদি হেড করতে ব্যর্থ হন। বল লাগে তার পেছনেই থাকা পেরিসিচের হাতে। রেফারি যদিও প্রথমে পেনাল্টি দেননি। অনেক সময় নিয়ে ভিডিও রিপ্লে দেখে পেনাল্টির বাঁশি বাজান আর্জেন্টাইন রেফারি। পেনাল্টি থেকে টাণ্ডা মাথায় গোল করেন গ্রিজমান।

ক্রোয়েশিয়াকে ম্যাচে ফেরালেন পেরিসিচ
২৮ মিনিটে ইভান পেরিসিচের দারুণ গোলে ১-১ সমতায় ফিরেছে ক্রোয়েশিয়া। গোলটা ছিল দলীয় প্রচেষ্টার ফসল। ফ্রি-কিক থেকে আসা বল বক্সের ভেতর ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হয়েছিল ফ্রান্স। মানজুকিচের হেড থেকে আরেকটি হেডে বল পেরিসিচের সামনে নামান ভিদা। জায়গা করে নিয়ে বাঁ পায়ের শটে বল জালে পাঠান পেরিসিচ।

মানজুকিচের আত্মঘাতী গোলে এগিয়ে ফ্রান্স
১৮ মিনিটে মারিও মানজুকিচের আত্মঘাতী গোলে এগিয়ে গেছে ফ্রান্স। বক্সের সামনে ক্রোয়েশিয়ার ব্রোজোভিচ আঁতোয়ান গ্রিজমানকে ফাউল করায় ফ্রি-কিক পেয়েছিল ফ্রান্স। গ্রিজমানের ফ্রি-কিকে বক্সের ভেতর থেকে হেডে বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে নিজেদের জালে জড়িয়ে দেন মানজুকিচ। গোলরক্ষক দানিয়েল সুবাসিচের করার ছিল না কিছুই। বিশ্বকাপের ফাইনালে আত্মঘাতী গোল করা প্রথম খেলোয়াড় মানজুকিচ। এই মানজুকিচই সেমিফাইনালে অতিরিক্ত সময়ে গোল করে ক্রোয়েশিয়াকে ফাইনালে তুলেছিলেন। সেমিফাইনালের নায়ক ফাইনালে খলনায়কে পরিণত হবেন? জবাব দেবে সময়ই!

শেষের লড়াই শুরু
শুরু হয়ে গেল বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচ। শেষ হাসি কে হাসে, সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা।

অপরিবর্তিত একাদশ
আগের ম্যাচের একাদশ নিয়েই আজ ফাইনালে খেলবে দুই দল। সেমিফাইনালে ফ্রান্স হারিয়েছিল বেলজিয়ামকে, ক্রোয়েশিয়া ইংল্যান্ডকে। প্রথমবারের মতো ফাইনাল খেলছে ক্রোয়েশিয়া, প্রথম শিরোপা জয়েরও হাতছানি ক্রোয়াটদের সামনে। তৃতীয়বারের মতো ফাইনালে ওঠা ফ্রান্সের দ্বিতীয় শিরোপা জয়ের সুযোগ।

ফ্রান্স একাদশ
লরিস, প্যাভার্ড, ভারানে, উমতিতি, হার্নান্দেজ, পগবা, কান্তে, মাতুইদি, গ্রিজমান, জিরুদ, এমবাপে।

ক্রোয়েশিয়া একাদশ
সুবাসিচ, ভারসালকো, স্ট্রিনিক, লভরেন, ভিদা, রাকিটিচ, মডরিচ, ব্রোজোভিচ, পেরিসিচ, মানজুকিচ, রেবিক।

পরিসংখ্যানে ফ্রান্স-ক্রোয়েশিয়া
এর অাগে পাঁচবার মুখোমুখি হয়েছে দুই দল। ফ্রান্স জিতেছে তিনটি (১৯৯৮, ১৯৯৯, ২০০০) এবং বাকি দুই ম্যাচ ড্র হয়েছে (২০০৪, ২০১১)।

ফ্রান্সের দ্বিতীয়, না ক্রোয়েশিয়ার প্রথম
১৯৯৮ সালে স্বাধীন দেশ হিসেবে প্রথমবার বিশ্বকাপে খেলতে এসেই সেমিফাইনালে উঠেছিল ক্রোয়েশিয়া। শেষ চারে ফ্রান্সের কাছে হেরে থেমে গিয়েছিল তাদের স্বপ্নযাত্রা, ফ্রান্স জিতেছিল প্রথম শিরোপা। ২০ বছর পর এবার ফাইনালে মুখোমুখি দুই দল। ফ্রান্স দ্বিতীয় শিরোপা ঘরে তুলতে পারবে? নাকি ক্রোয়েশিয়া জিতবে প্রথম শিরোপা?

Tags: